টাঙ্গাইল
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা অন্যতম। এটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত। টাঙ্গাইল জেলার আয়তন ৩৪১৪. ৩৫ বর্গ কিলোমিটার
এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ। আয়তনের দিক থেকে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম
জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলা। টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা তার ৯৭৫ বর্গ কিলোমিটার এবং
ময়মনসিংহ সদর মহকুমা থেকে ২৪৩৯ বর্গ কিলোমিটার জমি থেকে টাঙ্গাইল জেলা তৈরি করেন। টাঙ্গাইল জেলায় মোট ১২টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলা গুলো হলো:
ধনবাড়ি, মধুপুর, গোপালপুর, ভুয়াপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, সখিপুর, টাঙ্গাইল সদর, বাসাইল, দেলদুয়ার, মির্জাপুর এবং নাগরপুর।
উপজেলার সংখ্যা অনুসারে টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। জেলাটিতে মোট ১১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী টাঙ্গাইলের মোট জনসংখ্যা ৪৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৯,৫৭,৩৭০ জন এবং
মহিলা ২০,৪৭,৭১৩ জন। ৩৬,৮২, ৫৯৬ জন মুসলিম এবং ২,৯৬,২৩৭ জন হিন্দু , ১০০ জন বৌদ্ধ ও অন্যান্য ২০২৫ জন।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে জেলাটি বাংলাদেশের পঞ্চম। টাঙ্গাইল জেলার সাক্ষরতার হার ৭১.২১ শতাংশ।
এখন আমরা জানবো টাঙ্গাইলের সেই দুইটি সেরা দর্শনীয় স্থানঃ

মহেরা জমিদার বাড়ি
মাহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত।এই জমিদার বাড়ির মত সুন্দর এবং যত্নে সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। মহারা জমিদার বাড়ি আট একর জমির উপর বিস্তৃত।
মহেড়া জমিদার বাড়ি প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বরূপ। জমিদার বাড়িটির ভিতরে রয়েছে ছোট পার্ক, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট, লেক ইত্যাদি।
এই জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথেই বিশাল দুইটি সুরম্য গেট স্থাপিত আছে। রয়েছে তিনটি বিশাল ভবন এছাড়া রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর,
গোমস্তাদের ঘর, দীঘি ও আরো তিনটি লজ রয়েছে। প্রবেশ পথের আগেই বিশাখা সাগর নামে একটি দীঘি আছে। মূল ভবনে পিছনের দিকে দুটি পুকুর রয়েছে। পুকুর দুটির নামপাসরা পুকুর ও রানী পুকুর।
Read More: লোভ নিয়ে স্ট্যাটাস, ক্যাপশন ও কবিতা।
মহেরা জমিদার বাড়িতে যে ভবন গুলো রয়েছে
চৌধুরী লজ: মূল ভবন দিয়ে ঢোকার পর গোলাপি রঙের যে ভবনটি দেখা যায় তাই চৌধুরী লজ।এই লজটি রোমান স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ভবনটি দুই তালা বিশিষ্ট। দোতলা এই ভবনের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান ও সবুজ মাঠ।
মহারাজ লজ: মহেরা জমিদার বাড়ির আরো একটি লজের নাম হল মহারাজ। এটি বাইজেনটাইন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। ভবনটির সিঁড়ির বাঁকানো রেলিং
ও ঝুলন্ত বারান্দা এর শোভা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। ভবনটিতে কক্ষের সংখ্যা ১২ টি। মহারাজ লজ ভবনের সামনে ৬ টি
কলাম আছে। এই ভবনটি শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আনন্দ লজ: মহেরা জমিদার বাড়ির অন্যান্য ভবনের চেয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হচ্ছে তিনতলা বিশিষ্ট আনন্দ লজ। ভবনটির ঝুলন্ত বারান্দা একে
আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। আনন্দ লজের সামনে হরিণ, বাঘ ও পশু-পাখির মূর্তিসহ একটি চমৎকার বাগান আছে এগুলো অন্যান্য ভবনের তুলনায় একে আলাদা করে তুলেছে।
কালীচরণ লজ: কালীচরণ লজটি জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির শেষের দিকে নির্মিণ করা হয়েছিল।কালীচরণ লজ ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের আদলে তৈরি।
এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অন্যোন্য স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিকাল বেলা এই ভবনের ভেতর থেকে আলোর সুন্দর ঝলকানি দেখা যায় অনেক সময় ।
এছাড়াও মহেরা জমিদার বাড়িতে রয়েছে নায়েব ভবন, কাচারি ভবন ও রানী মহল।
প্রবেশ টিকেটের মূল্য
মহেরা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ মূল্য ৮০ টাকা। এখানে গাড়ি পার্কিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পার্কিং ফি ৫০ টাকা। শিশু পার্কে ঢোকার
টিকেটর মূল্য ২০ টাকা। সুইমিং করলে টিকিটের মূল্য ৩০০ টাকা। বোট রাইডের জন্য টাকার পরিমান নির্দিষ্ট নয়। এতে দরদাম করে চড়তে হয় কেননা ছুটির দিনগুলোতে রাইডে চড়ার মূল্য অনেক বেশি বেড়ে যায়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মহেরা জমিদার বাড়ি এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। মহেরা জমিদার বাড়ি যেতে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে টাঙ্গাইলের
নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে।বাসে যেতে সময় লাগবে ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা। তবে এই ঢাকা টাঙ্গাইল রোডে প্রায়শই জ্যাম থাকে তাই সে ক্ষেত্রে সময়ের একটু পরিবর্তন হতে পারে।
নাটিয়াপাড়া বাস ষ্ট্যান্ডে এসে নাটিয়াপাড়ায় বাস থেকে নেমে সিএনজি, রিকশা বা বেবী টেক্সী যোগে মহেরাপাড়া পুলিশ প্রশিক্ষন
কেন্দ্রে আসতে হবে। মহেরা জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়া দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে টাঙ্গাইল আসতে হবে। টাঙ্গাইল নটিয়াপাড়া এসে উল্লেখিত উপায়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করা যাবে।
কোথায় থাকবেন
৩০০০ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচে আপনি ইচ্ছে করলে পরিবারসহ থাকতে পারবেন। এতে আপনাকে প্রতি রাতের
জন্য খরচ করতে হবে তিন হাজার থেকে দশ হাজার টাকা। এছাড়া আপনি ইচ্ছা করলে সিঙ্গেল ও থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
মহেরা পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি স্বল্প মূল্যের ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে আপনি নিজের পছন্দের মত খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে পারবেন।
দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি
টাঙ্গাইলের অন্যান্য জমিদার বাড়ির মধ্যে দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি অন্যতম। বাংলাদেশে যে কয়টি মুসলিম জমিদার
বাড়ি এখনও খুব ভালোভাবে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি।
দেলদুয়ার জমিদার বাড়িটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে সজ্জিত। চারদিকে দেয়ালবেষ্টিত একতলা জমিদার বাড়িটির ভেতরে
আছে বিশাল শিশু গাছ এবং নানা জাতের ফুল গাছ। এছাড়াও আছে সাদা জাতের কাঠ গোলাপ গাছও।
স্থানের বর্ণনা
দেলদুয়ার জমিদার বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। পূর্ব-দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি লাল রঙের ইমারত বিশিষ্ট মসজিদ।
মসজিদটি তিনটি বিশাল গম্বুজ বিশিষ্ট। তিনটি বিশাল গম্বুজ মসজিদকে সৌন্দর্য প্রদান করেছে আর এই মসজিদের জন্যই দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি সৌন্দর্যায় পূর্ণতা পেয়েছে।
মসজিদের সামনে আছে সুবিশাল পুকুর। জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে আম বাগান এবং এই আম বাগানের মাঝখানে রয়েছে
টালির শেড ঘর। ধারণা করা হয় এটি ছিল জমিদার বাড়ির নারীদের আড্ডা দেওয়ার জায়গা বা আড্ডাখানা।
এর ইতিহাস
ইতিহাসের পাতায় দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বা তৈরি করা হয়েছিল এ সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি।
তবে জানা যায় জমিদারদের পূর্ব পুরুষ আফগানিস্তানের গজনী থেকে দেলদুয়ারে এসেছিলেন।
এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফতেহদাদ খান গজনবী লোহানি। সে আফগানিস্তানের গজনী থেকে আসায় তার নামের শেষে গজনবী লোহানি খেতাব ব্যবহার করা হয়েছে।
জমিদার বাড়ির দুইজন আলোচিত সুনামধন্য জমিদার হলেন স্যার আবদুল করিম গজনবী এবং স্যার আবদুল হালিম গজনবী।
যারা ছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত ও কবি বেগম রোকেয়ার বোন করিমু নেসা খানম এবং আব্দুল হাকিম খান গজনবীর সন্তান।
১৮৭২ সালে জন্ম নেওয়া স্যার আবদুল করিম গজনবী ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে পড়ালেখা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে ব্রিটিশ সরকারের দুইবার মন্ত্রী ছিলেন।