বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাড়ি কাপড়ের হাট। করটিয়া হাট।
আসলামু আলাইকুম দর্শক। আশা করি সবাই আল্লাহর দোয়ায় ভালো আছেন। আজকে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের হাট, করটিয়া হাট সম্পর্কে।তাই আশা করি করটিয়া হাট সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়বেন।চলুন ব্লগটি শুরু করা যাক।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের হাট। এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের হাট হচ্ছে করটিয়া হাট।এটি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।করটিয়া হাট টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। হাটটি প্রায় ৪৫ একর জমির উপর অবস্থিত।
টাঙ্গাইল জেলা টাঙ্গাইল শাড়ি এবং মিষ্টির জন্য সকলের কাছে সুপরিচিত।এছাড়াও টাঙ্গাইল জেলা একসময় টমটম বা ঘোরার গাড়ির জন্যও বিখ্যাত ছিল।টাঙ্গাইল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে করটিয়া হাট অবস্থিত।
করটিয়া হাট একটি প্রসিদ্ধ হাট যা বাংলাদেশের সবার মুখে মুখে আছে। এটি একটি বিসাল বড় হাট যেখানে কাপড়, গ্লাস, পাত্র, জুতা, আকর্ষণীয় আপারেল এবং আরও অনেক কিছুতে মেলামেশা ভাবে বিক্রয় হয়।
করটিয়া হাটের সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
এই হাটে শাড়ি কাপড় পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রয় করা হয়। তুলনামূলকভাবে কম দাম এবং মানে উন্নত টাঙ্গাইল শাড়ি পাওয়া যায় বলে এই হাট ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের কাছে বহুল পরিচিত। করটিয়া হাটে শুধু টাঙ্গাইল শাড়ি নয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি কাপড় পাওয়া যায় ,যা দামের তুলনায় মানে অনেক ভালো। টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন ধরনের বিখ্যাত পোশাক তৈরি করে আসছে এবং করটিয়া হাটে তা বিক্রি করে আসছে। করটিয়া হাটে শুধু দেশি ব্যবসায়ী নয় বরং বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য কিনতে আসে এই করটিয়া হাটে।

বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে যেমন ঢাকা-সিলেট চট্টগ্রাম বগুড়া খুলনা ইত্যাদি বড় বড় জায়গার মানুষ এই হাটে আসে তাদের প্রয়োজনীয় শাড়ি এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু কিনতে। এর প্রধান কারণ হলো এই হাটে অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক কম দামে সবকিছু বিক্রি হয়। এই হাটকে ঘিরে প্রায় হাজার হাজার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস নির্ভরশীল। তারা শুধু সাপ্তাহের দুটি দিনের অপেক্ষায় থাকে যে দুটি দিনে হাট লাগে।
এমন অনেক মানুষ আছে যারা বড় বড় মহোজনের দোকানে থাকে। তারা দোকানে থেকে দোকানের মালপত্র বিক্রি করে দেয়, এবং এর জন্য তারা দিনশেষে ১০০০ এর মত করে টাকা পায়। এই হাটে গেলে দেখা যায় নানা রকমের ভ্যান যা হাটের প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মালামাল যাতায়াত করতে ব্যবহৃত হয়। ভ্যান ছাড়াও দেখা যায় নানা রকমের অটো এবং নানা রকমের গাড়ি যা শুধু মাত্র ব্যবহৃত হয় মালামাল পরিবহনের জন্য। হাটের দিনে প্রায় প্রতিদিন ১০,০০০ এর মত মানুষ এই হাঁটে দেখা যায়।
Read More: করটিয়া সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য।
করটিয়া হাটের ইতিহাস:
করটিয়া হাটের ইতিহাস টাঙ্গাইল শাড়ির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।লোকমুখে শোনা যায় এই হাটের বয়স প্রায় ২০০ বছর বা তারও অধিক।এক সময় টাঙ্গাইলের তাঁতীরা মসলিন শাড়ি তৈরি করতেন।শাড়ি তৈরি করার জন্য তারা “চরকা “নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করতেন যার দ্বারা সুতা কাটা হত।মূলত বাড়ির গৃহিণীরা এই সুতা কাটার কাজ করতেন।এই সুতার দিয়ে তাতিরা তাদের নৈপুন দক্ষতার মাধ্যমে তাদের তাতে তৈরি করতেন বিখ্যাত শাড়িগুলো।ইতিহাস থেকে জানা তথ্য মতে বসাকরাই মূলত আসল তাঁতি। মনে করা হয় তাদের হাত ধরেই টাঙ্গাইল শাড়ি এতদূর পর্যন্ত এসেছে।
ভারত বিভাগের আগে কলকাতায় টাঙ্গাইল শাড়ির বাজার ছিল।দেশ যখন ভাগ হয়ে যায় তখন মূল হাটটি ছিল বাজিতপুরে। তৎকালীন সময় এখানে শুধু দেশীয় পাইকাররা নয় বরং বিদেশ থেকে যেমন ভারত, নেপাল এবং ইংল্যান্ডের পাইকাররাও এই হাটে আসতো কাপড় ক্রয় করার জন্য।টাঙ্গাইল শাড়ির এত চাহিদা দেখে ১৮ শতাব্দীতে করোটিয়ার জমিদার পরিবার একটি হাটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।এরই পরিপ্রেক্ষিতে পানি পরিবারের সদস্য চাঁদ মিয়া করটিয়া হাট প্রতিষ্ঠা করেন।কয়েক সপ্তাহ ধরে করোটিয়ার হাটে হাট বসতো।যেহেতু তৎকালীন সময়ে বেশি বাজার ছিল না তাই লোকজন হাট থেকে সকল পণ্য ক্রয় করতেন। তৎকালীন সময়ে করোটিয়ার হাটের ওই জায়গায় নদীর বন্দর ছিল।
করটিয়া হার্ট সপ্তাহে কি কি বার খোলা থাকে?
উত্তর:করটিয়া হাট সপ্তাহে দুইদিন খোলা থাকে।হাটটি মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হয় এবং বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত খোলা থাকে।এই সময় হাটটিতে প্রচুর লোকসমাগম দেখা যায়।বিক্রেতা রা তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য এবং ক্রেতারা তাদের পছন্দের জিনিস ক্রয় করার জন্য এই দুই দিন হাটে প্রচুর ভিড় জমায়।
হাট টির বর্তমান পরিস্থিতি:
হাঁটটি বর্তমানে আগের থেকে অনেক উন্নত অবস্থায় পৌঁছেছে। এখানে শাড়ি কাপড় পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়।এখান থেকে পাইকারি মূল্যে ক্রয় করে অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থানে খুচরা মূল্য এসব শাড়ি বিক্রি করে থাকেন।শাড়িগুলো পাথরাইল,কালিহাতী,এনায়েতপুর,নরসিংদীর বাবুরহাট,সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এবং ঢাকার ইসলামপুর প্রভৃতি থেকে পাওয়া যায়।বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী বিশেষ করে ভারত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে শাড়ি কাপড় ক্রয় করে নিজ দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে।বাংলাদেশের শাড়ি কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছে করটিয়া হাট অতি পরিচিত।
করটিয়া হাটে শুধু শাড়ি কাপড়ই নয় বরং সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে গরুর হাট।এই হাটে ধানের বীজ থেকে শুরু করে আসবাবপত্র এবং আরও অনেক কিছু পাইকারি মূল্যে পাওয়া যায়।
পন্য সমূহের মূল্যের দিক থেকে সুযোগ সুবিধা:
বর্তমানে আমাদের দেশের দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি তা বিভিন্ন স্থানে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।এমন অবস্থায় সাধারন লোকজনের পক্ষে এ সকল দ্রব্যমূল্য ক্রয় করা দুরূহ। কিন্তু এই হাটের পরিবেশ অন্যান্য জায়গা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তিকর।কেননা এ জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ পাইকারি মূল্যে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারেন।তাই দিন দিন করটিয়া হাটের পরিচিতি সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ছে এবং হাটটি এভাবে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে।
পরিশেষে:
আজকে আমরা এই ব্লগটির মাধ্যমে জানতে পারলাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের হাট করটিয়া হাট সম্পর্কে।আশা করা যায় ব্লক টি পড়ার মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত যারা করটিয়া হাট সম্পর্কে জানতেন না তারা কিছুটা হলেও তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। আজকে এই পর্যন্তই।ব্লগটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।