বাংলাদেশের ৫ টি ঐতিহ্যবাহী সেতু।
আসসালামু আলাইকুম দর্শক। আশা করি সবাই ভালো আছেন।আাজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি বাংলাদেশের ৫ টি ঐতিহ্যবাহী সেতু সম্পর্কে। এ বিষয় নিয়ে অনেকে আলোচনা করলেও আমি এ বিষয়কে নিজের মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ৫ টি সেতু হলো:
- ক্বীন ব্রিজ।
- কালুরঘাট ব্রিজ।
- পানাম ব্রিজ।
- মীরকাদিম ব্রীজ।
- বাউড়া পুরাতন ব্রিজ।
ক্বীন ব্রীজ
** প্রথমত, ক্বীন ব্রীজ হলো বাংলাদেশের সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর উপর স্থাপিত একটি সেতু। এটি লৌহ নির্মিত। সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীন ব্রীজটি অবস্থিত। এর এক দিকে দক্ষিণ সুরমা ও অপর দিকে বন্দর বাজার। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর থেকে ২৪৬ কিলোমিটার উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থিত। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে এই ব্রীজটি মাত্র ০.৫ K.m দূরে অবস্থিত।এটি সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে পরিচিত।
দ্বিতীয়ত আমরা বলতে পারি, সুরমা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।এই ব্রীজটিকে শহরটির “প্রবেশদ্বার” বলা হয়। ব্রীজটি ব্রিটিশ গভর্নর মাইকেল ক্বীন এর নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
কালুরঘাট ব্রিজ
** কালুরঘাট ব্রিজ কর্ণফুলী নদীর উপর একটি সেতু। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে নদী পারাপারের জন্য স্থানটি কালুর ঘাট নামে নদী পারাপারে ভূমিকা রেখে আসলেও ১৯৩০ সালে ব্রিটিশদের সময়ে এ রেল সেতুটি নির্মিত হয়। স্থানীয় ভাবে কালুরঘাট সেতুটি কালুরঘাটের পোল নামে পরিচিত। সেতুটির বয়স বর্তমানে ৯০ বছরেরও বেশি। ২০০১ সালে এই সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১১ সালেও চুয়েটের একদল গবেষক আরেকবার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলেন।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের দরকার দেখা দেয়। ফলে ১৯৩০ সালে ব্রুনিক এন্ড কোম্পানী সেতু বিল্ডার্স হাওড়া নামক একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। মূলত: ট্রেন চলাচলের জন্য ৭শ গজ লম্বা সেতুটি সে বছর ৪ ই জুন উদ্বোধন করা হয়।
পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুনরায় বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধে মোটরযান চলাচলের জন্য ডেক বসানো হয়। দেশ বিভাগের পর ডেক তুলে ফেলা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সব যানবাহন চলাচল যোগ্য করে সেতুটির বর্তমান রূপে গঠন করা হয় । ব্রিটিশদের সময়ে নির্মিত সেতুটির রয়েছে ২টি এব্যাটমেট, ৬টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টীলপিলার ও ১৯টি স্প্যান। এটি ২৩৯ মিটার দীর্ঘ।
Top 10 Garments in Bangladesh 2023.
পানাম সেতু
**পানাম সেতু : পানাম সেতু সোনারগাঁয়ের অন্তর্গত হাবিবপুরের কিছুটা পূর্বদিকে কোম্পানিগঞ্জ ও বারি-মজলিশের মধ্যবর্তী পাকা রাস্তা সংযোগকারী একটি পুরাতন সেতু। সেতুটি হাজীগঞ্জের সঙ্গে বৈদ্যের বাজারের সংযোগকারী কাঁচা সড়কে পঙ্খীরাজ খালের উপর ১৭ শতকে নির্মিত হয়। প্রথম অবস্থায় সেতুটি ‘কোম্পানিগঞ্জের সেতু ‘ নামে পরিচিত ছিল। ১৭৩ ফুট দীর্ঘ এবং ১৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট তিন খিলান বিশিষ্ট এই সেতুর মধ্যবর্তী খিলানটি বেশি প্রশস্ত ও উঁচু। ফলে এর তলা দিয়ে সহজে নৌযান চলাচল করতে পারে।
সেতুপথটি বৃত্তাকারে সন্নিবেশিত ইটের তৈরি। স্থাপত্যরীতি বিবেচনায় সেতুটি ১৭ শতকে নির্মিত বলে অনুমিত হয়।পানাম নগর বা পানাম শহর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলাধীন প্রাচীন শহর গুলোর মধ্যে একটি । এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগড়াপাড়া পয়েন্ট থেকে ২.৫ কিঃ মিঃ উত্তরে অবস্থিত। মূঘলরা শাসনে আসার পর মুঘলরা সোনারগাঁতে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু নির্মাণের ফলে সোনারগাঁ ও পানাম নগর নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। মূঘল আমল উপমহাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ।
ব্যপক সংখ্যক উন্নয়ন মূলক কাজ এ সময় পরিলক্ষিত হয়। পানামও এর ব্যতিক্রম নয়। ধারণা করা হয় পানাম সেতু সেই সময়কালের নির্মাণ। সোনারগাঁ এলাকার বেশ কয়েকটি মুঘল স্থাপনা বর্তমানে সময়ে অক্ষত রয়েছে, তার ভেতর তিনটি সেতু / ব্রীজ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পানাম সেতু, দালালপুর সেতু ও পানাম নগর সেতু। সেতুটির প্রকৃত নির্মাণ কাল সংক্রান্ত কোন প্রামাণ্য শিলালিপি না থাকলেও স্থাপত্যরীতি বিবেচনা করে ঐতিহাসিকরা এটিকে মুঘল আমলে অর্থাৎ ১৭ শতকে নির্মিত স্থাপনা হিসেবে একমত হয়েছেন।
তিনটি খিলান বিশিষ্ট সেতুটি দৈর্ঘে ১৭৩ ফুট এবং প্রস্থে ১৪ ফুট। সেতুটির খাঁড়া ইটের গাথুনি বৃত্তাকারে সন্নিবেশিত। সেতুর মধ্যবর্তী খিলানটি অপর দুটি অপেক্ষা উচু এবং প্রশস্ত। যার ফলে সেতুটির নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারত । সেতুটি এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।
মীরকাদিম সেতু
**মীরকাদিম সেতু: মীরকাদিম সেতু পোলঘাটা সেতু নামেও পরিচিত। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ীতে অবস্থিত একটি প্রাচীন সেতু ও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি মুন্সিগঞ্জের রামপাল নামক স্থানে অবস্থিত।পানাম-পোলঘাটা সেতুটি প্রাচীন ও বিলুপ্ত শ্রীবিক্রমপুর মহানগরের সীমানা পরিখা মীরকাদিম খালের উপর পানাম পোলঘাটা গ্রামে অবস্থিত। মীরকাদিম খালের উপর অবস্থিত বলে এর নাম মীরকাদিম সেতু।সেতুটির সঠিক নির্মাণকাল ও নির্মাতা সম্পর্কে জানা যায় না। তবে মনে করা হয় এটি নির্মাণ করা হয়েছিল মুঘল আমলে।
সেতুটি তিন খিলান বিশিষ্ট ও এটি নির্মাণে চুন-সুড়কি ব্যবহার করা হয়েছিল। মূল সেতু থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে টংগিবাড়ী ও ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মুন্সীগঞ্জ শহর অবস্থিত। এই সেতুটির ৫২.৪২ মিটার লম্বা।সেতুটি ধনুকাক্রিতির।বিভিন্ন সময় সেতুটি সংস্কারের ফলে এর আদিরুপ অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক বড়ো বড়ো সেতু তৈরি করা হয়েছে যা প্রশংসাপ্রাপ্য।এই সেতু গুলো দৈর্ঘে যেমন লম্বা তেমনি দেখতে সুন্দর।
তবে তুলে ধরা সেতুগুলো ঐতিহাসিক এবং দৃষ্টিনন্দন।পাশাপাশি সেতুগুলো নির্মাণের পিছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য।
বাউরা পুরাতন ব্রিজ
বাউরা পুরাতন ব্রিজ একটি ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ ছিল। এটি বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বাউরা উপজেলায় অবস্থিত।
ব্রিজটি একটি বাঁধ ব্রিজ ছিল, যা আদিবাসী শিল্পের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল। এটি মূলত কাঠের স্তম্ভগুলিতে উঠিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং ব্রিজের মাঝের অংশটি উঁচুতে স্থাপিত করা হয়েছিল। ব্রিজের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ মিটার ছিল। এটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে আদেশ ও বন্ধুত্ব প্রদর্শনের একমাত্র রাস্তা ছিল।
সময়ের সাথে বাউরা ব্রিজ ধীরে ধীরে পদিক্ষেপ হয়েছিল এবং অন্য মধ্যবিত্ত ও মজুল ব্রিজগুলি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে পুরাতন ব্রিজটির প্রায় কেবলমাত্র অবশিষ্টগুলি রয়েছে এবং এটি একটি ঐতিহাসিক ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। প্রাচীন ঐতিহাসিক মানচিত্রে এটি একটি মুখ্য আকর্ষণ হিসাবে থাকে, এবং ভ্রমণকারীদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান হিসাবে গণ্য হয়।