সম্মানিত দর্শকবৃন্দ,আশা করি সবাই ভালো আছেন।সবার দোয়ায় আবারও চলে এলাম নতুন একটা তথ্য নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি শনির বলয় সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক।
সৌর জগতের সাতটি গ্রহের মধ্যে শনি গ্রহ অন্যতম। এটি আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ । এবং এটি সূর্যের দিক থেকে অবস্থান হলো ষষ্ঠতম। প্রথমত হিন্দু পৌরাণিক দেবতা শনির এই নাম অনুসারে গ্রুপের নামকরণ করা হয়েছিল শনি। আবার এটির ইংরেজি নাম Saturn এই নামকরণ করা হয়েছে আবার রোমান দেবতা স্যাটার্ন এর নাম অনুযায়ী।

২০০৭ সাল পর্যন্ত এই শনি গ্রহের আবিষ্কৃত মোট উপগ্রহের সংখ্যা ছিল ৬০টি তবে বর্তমানে এটি সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন। এখন আমরা দেখে নিব এই গ্রহের কিছু উপগ্রহ সম্পর্কে, তাদের নাম শনি থেকে তাদের দূরত্ব, ব্যাসার্ধ , আবিষ্কারের সময় এবং যারা আবিষ্কার করেছেন তাদের নাম সম্পর্কে, তাহলে দেখে নেয়া যাকঃ
২০০৭ সাল পর্যন্ত শনির প্রায় ৬০টি উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর ভিতর উল্লেখযোগ্য উপগ্রহগুলি হলো-
উপগ্রহের নাম | শনি থেকে দূরত্ব (অর্ধ-অক্ষ) | ব্যাসার্ধ | আবিষ্কারের সময় | আবিষ্কারক |
ইয়াপটাস (Iapetus) | ৩৫৬১ হাজার কিমি | ৭৩০ কিমি | ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দ | ক্যাসিনি (Cassini ) |
এ্যাটলাস (Atlas) | ১৩৮ হাজার কিমি | ১৪ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | টেরিলে (Terrile) |
এনচেলাদাস (Enceladus ) | ২৩৮ হাজার কিমি | ২৬০ কিমি | ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দ | হার্সেল (Herschel ) |
এপিমেথাস (Epimetheus) | ১৫১ হাজার কিমি | ৫৭ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | ওয়াকার (Walker) |
ক্যালিপ্সো (Calypso) | ২৯৫ হাজার কিমি | ১৩ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | প্যাসকু (Pascu) |
জানুস (Janus) | ১৫১ হাজার কিমি | ৮৯ কিমি | ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ | ডলফাস (Dollfus) |
টাইটান (Titan) | ১২২২ হাজার কিমি | ২৫৭৫ কিমি | ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দ | হাইগেন্স (Huygens) |
টেথিস (Tethys) | ২৯৫ হাজার কিমি | ৫৩০ কিমি | ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দ | ক্যাসিনি (Cassini ) |
টেলেস্টো (Telesto) | ২৯৫ হাজার কিমি | ১৫ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | রেইট্সেমা ( Reitsema) |
ডাওনে (Dione) | ৩৭৭ হাজার কিমি | ৫৬০ কিমি | ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দ | ক্যাসিনি (Cassini ) |
প্যান (Pan) | ১৩৪ হাজার কিমি | ১০ কিমি | ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ | শোয়াল্টার (Showalter) |
প্যান্ডোরা (Pandora) | ১৪২ হাজার কিমি | ৪৬ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | ভয়েজার-১ |
প্রোমিথিউস (Prometheus) | ১৩৯ হাজার কিমি | ৪৬ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | কোলিনস (Collins) |
ফিবি (Phoebe) | ১২৯৫২ হাজার কিমি | ১১০ কিমি | ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দ | পিকারিং (Pickering ) |
মিমাস (Mimas) | ১৮৬ হাজার কিমি | ১৯৬ কিমি | ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দ | হার্সেল (Herschel) |
রিয়া (Rhea) | ৪২৭ হাজার কিমি | ৭৬৫ কিমি | ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দ | ক্যাসিনি (Cassini ) |
হাইপেরিয়ান (Hyperion) | ১৪৮১ হাজার কিমি | ১৪৩ কিমি | ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দ | বণ্ড (Bond) |
হেলেনে (Helene ) | ৩৭৭ হাজার কিমি | ১৬ কিমি | ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ | ল্যাকুয়েস (Laques) |
শনির বলয় একে অন্য গ্রহ থেকে আলাদা করে। একটি শিশু ও বলয় দেখে বলে দিতে পারে গ্রহটি শনি।শনি গ্রহটির থেকে ২৮০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে প্রসারিত এই বলয়।শনিকে ঘিরে থাকা বলয়গুলি ক্রমশ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এমনটাই ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণার তথ্যে। বিজ্ঞানীরা তথ্য অনুযায়ী , শনির বলয়ে জমে থাকা বরফ অপ্রত্যাশিত গতিতে দ্রুত হারে ঝরে পড়ছে শনির পৃষ্ঠে এবং ছড়িয়ে পড়ছে মহাশূন্যে।গ্রহটির বলয়ের থেকে এই বলয়গুলির মধ্যে যতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, সেখানে পরপর ছয়টি পৃথিবীকে অনায়াসে বসিয়ে দেওয়া যেবে। শনি গ্রহের এই বলয় হয়তো আর বেশিদিন এমনভাবে দেখা যাবে না। কারণ, বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে শনিকে ঘিরে থাকা বলয়গুলি ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে।
শনিকে বলা হয় মিথেন গ্যাসের ভাণ্ডার এবং এর বলয় ধূলিকণা দিয়ে তৈরি , কোটি কোটি ছোটো থেকে বড় খণ্ড খণ্ড পাথরের টুকরো ও বরফের ছোট ছোট টুকরোর সম্মিলিত ঘূর্ণন অবস্থা। শনির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি/বলের কারণেই এগুলি বলয় আকারে অবিরাম গ্রহের চারপাশে ঘুরছে, যার ব্যাস প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মাইল। তাই বছরের পর বছর টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহটির ওপর নজর রাখলেও, এখনও পর্যন্ত এই দীর্ঘ বলয় পথ অতিক্রম করে তাতে পা রাখতে পারেননি কোন দেশের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই বলয়ই এবার হারাতে বসেছে, এর ঘনত্ব আগের থেকে অনেকটাই কমেছে বলে তুলে ধরেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা।

তথ্য মতে শনিতে চোখে পড়ার মত বলয়ের সংখ্যা ৭ থেকে ৮টি।তাদের নামগুলো হলো:’এ-রিং’, ‘বি-রিং’, সি-রিং’, ডি-রিং’, ‘ই-রিং’, ‘এফ-রিং’, ‘জি-রিং’, ‘এইচ-রিং’। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই বড় বলয়গুলি ছাড়াও আরও ছোট ছোট কয়েকটি বলয় রয়েছে শনির।জাপানি বিজ্ঞানী ড. জেমস ও’দোনোঘু (James O’Donoghue) এর তথ্য অনুযায়ী, গ্রহটির চারপাশে ঘূর্ণায়মান বরফের স্ল্যাবগুলি একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে এবং বলয়টি বেশ পাতলা হয়ে উঠছে।
মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অধ্যাপক দেবেন্দ্র ওঝার মতে, ”ওই গ্রহের জোরালো অভিকর্ষ বল ও চৌম্বক ক্ষেত্রের টানেই বলয় থেকে বরফের বৃষ্টি হচ্ছে শনির বুকে। তবে সব সময়ই তা সমান হারে হচ্ছে কি না, তা গবেষণা করে দেখতে হবে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর যেমন এক বছর লাগে, তেমনই শনির লাগে প্রায় সাড়ে ২৯ বছর ৪ মাস। ওই প্রদক্ষিণের সময় সূর্যের সঙ্গে তার কৌণিক অবস্থানে গ্রহটি কখন এই সৌরমণ্ডলের নক্ষত্রের কতটা কাছাকাছি আসছে বা থাকছে বা কত ক্ষণ থাকছে, তার উপরে ওই বরফ বৃষ্টির পরিমাণে বাড়া-কমা হওয়াটই স্বাভাবিক।
সনির বলয় ক্ষয়ে যাওয়া ১৯৮০ এর দশকে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ধরা পড়েছিল। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণার কোম্পানি নাসার তৈরিকৃত একটা মহাকাশ যান যার নাম ভয়েজার এই রহস্যময় অন্ধকার ব্যান্ড গুলি আবিষ্কার করেছিল। যা পরবর্তীতে ৩০০ মিলিয়ন (ত্রিশ কোটি) বছরের মধ্যে এই রিংগুলো সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তবে বর্তমানের বিজ্ঞানীরা এই ধারণার বিপরীতে তারা বলছেন 300 মিলিয়ন বছরের আগেই শনির বলইগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন প্রায় ১০ কোটি বছর পর শনি গ্রহের কোনো বলই টিকে থাকবে না।

৪০০ কোটি বছরের বেশি শনি গ্রহের বয়স। এই গ্রহের জন্মের সময় এতগুলো বলয় ছিল না। যত সময় পার হয়েছে ততই এর বলয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী এই বলই গুলোর বয়স ১০ কোটি বছরের বেশি হবে না। মূলত ওই গ্রহের চুম্বক ক্ষেত্র এবং জোরালো অভিকর্ষ বলের কারণে বরফের বৃষ্টির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সব সময় এই বৃষ্টি হবার কোন আশঙ্কা নেই বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছ। মূল গবেষক নাসার গর্ডার্ড প্রেস সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস ও দেনা গুড় বলেন অলিম্পিকের আস্ত একটা বড় সুইমিং পুল শনিগ্রহের সেই বলয় হতে সৃষ্টি হওয়া আধা ঘন্টার বৃষ্টিতেই পরিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন এইভাবে যদি বরফ ক্ষয় হয়ে বৃষ্টি হয়ে থাকে তবে শনি গ্রহ খুব শীঘ্রই তারা সব কটি বলয় হারিয়ে ফেলবে একদিন এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
রামানুজন বলেছেন, “ক্যাসিনি মহাকাশযান শনির বিষূব রেখার উপরে যে ভাবে তার একের পর এক বলয় থেকে জমা বরফ ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখেছে, তাকে এক রকম বরফের বৃষ্টিই বলা যায়। আর সেই বৃষ্টি এতটাই ঝমঝমিয়ে পড়ে চলেছে, মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য থেকে যে হিসেব কষা হয়েছিল, তা ওলটপালট হয়ে গিয়েছে।
অবশেষে সকল তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, সৌর জগতের অন্যতম গ্রহ শনি তার সুপারিচিত বলয় বরফ বর্ষণের ফলে সুদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে ফলবে।বিজ্ঞানিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী ১০ কোটি বছর পরে বা তার আগেই শনি গ্রহটি বলয়হীন হয়ে যাবে।
আমরা ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ব্লকটি পড়ে ফেলেছি। আপনাদের যদি মনে হয় কোন তথ্য সংক্ষিপ্ত হয়েছে বা কোন তথ্য দেওয়া হয়নি তাহলে আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে জানান আমরা শীঘ্রই সে সম্পর্কে উপস্থাপন করব। পরিশেষে এই ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের পাশে থাকবেন এবং আপনাদের পরিচিত সকল মানুষের সাথে এই ব্লগটি শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ।