বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বা গাজীপুর সাফারি পার্ক
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানতে পারবো বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সম্পর্কে। এছাড়াও পার্কটির প্রবেশ টিকিটের মূল্য, খোলা এবং বন্ধের সময়সূচি, পার্কিং ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এর প্রদর্শনের জায়গাগুলো, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করছি এ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়বেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ককে সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বলা হয়। এটি বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি সাফারি পার্ক। মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজায় এই সাফারি পার্কটির অবস্থান। সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর বাঘের বাজার থেকে পশ্চিম দিকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ইন্দবপুর গ্রামের কাছেই পার্কটি অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি প্রায় চার হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। ছায়া সুনিবিড় প্রাকৃতিক শোভায় ভরা এ পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্য মিশ্রিত গাছপালা ও বন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্যবাহী গজারি গাছ, শালবন, আকাশ চুম্বি, আকাশ মনি, কাশঁবন, ছন। এখানে আরও রয়েছে কয়েকটি বাঘ, সিংহ রয়েছে ৪ টি , ভাল্লুক আছে ৪ টি, জিরাফ ৪টি , জেব্রা আছে ৩ টি ও ১০টির মতো বন্য গরু। এছাড়াও কুমির সব পাখি ইত্যাদি সকল প্রাণী রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রবেশ ফি:
প্রাপ্ত বয়ষ্ক জন প্রতি পার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১৮ বয়সীদের নিচে সকলের জন্য টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ টিকিটের মূল্য ১০ টাকা।
গাড়িতে করে সাফারি পার্ক পরিদর্শন প্রাপ্ত বয়ষ্কদের টিকিট এর মূল্য ১০০ টাকা। আর অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য এটি অর্ধেক মানে ৫০ টাকা।
প্যাডেল বোট ভ্রমণ আধা ঘন্টার জন্য ২০০ টাকা।
পার্কিং ব্যবস্থা:
1. বাস পার্কিং ২০০ টাকা।
2. মিনি বাস বা মাইক্রোবাস পার্কিং ২০০ টাকা।
3. গাড়ি বা জিপ পার্কিং ফি ৬০ টাকা।
4. অটোরিকশা/সিএনজি ৬০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের খোলা এবং বন্ধের সময়সূচি:
সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদে বাকি ছয়দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পার্কটি খোলা থাকে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এ দেখার মত কিছু জায়গা:
সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সাম্বার, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমান, ভল্লুক, গয়াল, কুমির ও বিচিত্র পাখীর সম্ভার। পুরো পার্কটি জুড়ে রয়েছে নানা দর্শনীয় পশু-পাখি ও ভাঙ্কর্য। পার্কের প্রথমে ঢুকেই হাতের ডানে পুরো পার্কের মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আকাশ থেকে পুরো পার্কের নয়নজুড়ানো দৃশ্য দেখার জন্য আছে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও আছে ঝুলন্ত ব্রিজ ও হাতির উপড়ে চড়ার সুযোগ।
পার্কটিকে ৫টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা:
১. কোর সাফারি।
২. সাফারি কিংডম।
৩. বায়োডাইভার্সিটি পার্ক।
৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক।
৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
Read More: টাইটান ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার কারণ।
কোর সাফারি:
সাফারি পার্কের প্রধান আকর্ষণ এই কোর সাফারি। যেখানে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা দিয়ে ঘুরে বেড়াবেন জঙ্গলে। আর বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিন, জিরাফ, জেব্রা সহ বিভিন্ন প্রানি দেখা যাবে উন্মুক্ত অবস্থায়। দেখতে পারবেন বন্যপ্রাণী গুলো আপনার গাড়ির কাছে এসে খেলা করছে।
সাফারি কিংডম:
বাকি সব আকর্ষণীয় জিনিস রয়েছে সাফারি কিংডমের আওতায়। যেমন-
প্রকৃতি বিক্ষন কেন্দ্র
প্যারট এভিয়ারি
ক্রাউন ফিজেন্ট এভিয়ারি
ম্যাকাউ ল্যান্ড
ছোট পাখিশালা
ফেন্সি ডাক গার্ডেন
কুমির পার্ক
প্রজাপ্রতি বাগান
ইমু/অস্ট্রিচ গার্ডেন
কচ্ছপ ও কাছিম প্রজনন কেন্দ্র
লিজার্ড পার্ক
ভালচার হাউজ
হাতি শালা
মেরিন একুরিয়াম
অর্কিড হাউজ
পেলিকন আইল্যন্ড
ঝুলন্ত ব্রিজ
এগ ওয়ার্ল্ড
ধনেশ এভিয়ারি
প্রাইমেট হাউজ
লেক জোন
বোটিং লেক
লামচিতার ঘর
ক্যঙ্গারু এভিয়ারি
প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘর
শিশু পার্ক
হ্রদে বোটিং ছাড়া বাকি সব গুলো দেখতে ১০ টাকা করে টিকেট কেটে দেখতে হয় । সবগুলি দেখার প্যাকেজ মোট ১৬০ টাকা দিয়ে কেনা যায়। যেখানে আলাদা আলাদা সব ঘুরে দেখতে মোট ২৬০ টাকা লাগে। তাছাড়া বিভিন্ন খন্ড খন্ড প্যাকেজ আছে ১০০ টাকা ও ৫০ টাকার মধ্যে।
শিক্ষা সফর
শিক্ষা সফর বা পিকনিকের জন্য উপযুক্ত জায়গা রয়েছে। পার্কের বাহিরে পিকনিক করার জন্য রয়েছে বিশাল খালি জায়গা যেখানে গাড়ি পার্কিং করা যাবে । তবে এর জন্য ফি প্রদান করতে হবে। এছাড়াও কিছু স্পট আছে যেটা পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। শিক্ষা সফর বা পিকনিকের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আগে যোগাযোগ করতে করে তারপর যেতে হবে। শিক্ষা সফরের জন্য জায়গাটি আদর্শ
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা প্রচলিত অর্থে চালা ও নীচু ভূমি সমৃদ্ধ শালবনে দেখা যেত আমলকি, বহেড়া, হরিতকী, করই, শিমূল, হলদু, পলাশ, চাপালিশ, কুসুম, পিতরাজ, উদাল এবং বিবিধ লতাগুল্মরাজি। এ বনে আরো দেখা যেত মায়া হরিণ, চিতাবাঘ, বন বিড়াল, গন্ধগকুল, শিয়াল, সজারু, অজগর, হনুমান, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। শালবনে প্রায় ৬৩ প্রজাতির গাছপালা ও ২২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া যেত। বিভিন্ন কারণে যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ন, বন ধ্বংস করে কৃষি জমির বিস্তার, আবাসন, জবরদখল ও ভূমি বিরোধের কারনে শাল বনের অস্তিত্ব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের অস্তিত্বের জন্য বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ভাওয়ালগড় এলাকায় ‘‘সাফারী পার্ক’’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কিভাবে যাবেন ?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতি-বনশ্রি বাস মাওনা যায়। এই বাসে করে ভবানীপুর অথবা বাঘের বাজার নেমে যেতে হবে।এছাড়াও মহাখালি থেকেও এই বাসে উঠা যায়।অথবা সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, গুলিস্তান থেকে গাজিপুর পরিবহন ও যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, রামপুরা থেকে অনাবিল বা অন্য যে কোন বাসে গাজিপুর চৌরাস্তা নামবেন।সেখান থেকে মাওনাগামী তাকওয়া অথবা চ্যাম্পিয়ন বাসে উঠতে হবে এবং ভবানীপুর অথবা বাঘেরবাজারে নেমে যেতে হবে।
ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রার ক্ষেত্রে:
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে জয়দেবপুর নেমে তাকওয়া বাসে করেও বাঘের বাজার যেতে হবে।সেখানে নেমে সেখান থেকে অটোরিক্সা/সিএনজিতে যোগে খুব সহজেই সাফারি পার্ক যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
এই পার্কে সকালে গিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে বিকেলে ফিরে আসা যায়। তারপরও কেউ চাইলে পার্কে থাকতে পারবেন। রাত্রিযাপনের জন্য দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে বিশ্রামাগার আছে। থাকতে হলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে আসলে গাজিপুর চৌরাস্তা এসে যেকোন হোটেলে থাকা যেতে পারে।
কোথায় খাবেন?
পার্কের প্রধান ফটকের একটু আগেই কয়েকটি রেস্তোরাঁ দেখা যায়। সেখানে খাওয়া দাওয়া করার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটন স্পট বিধায় সব কিছুর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। এছাড়া বাঘের বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁ আছে সেখানেও খাবারের ভালো বন্দোবস্ত আছে।
এছাড়াও পার্কের ভিতরে দুটি ফুড কার্ট আছে সেখানে ফাস্ট ফুড আইটেম সহ কোমল পানীয়, চিপস ইত্যাদি পাওয়া যায়। এবং সকালে গিয়ে অর্ডার করলে দুপুরের খাবারও পাওয়া যায়। তবে ভিতরে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই কিছু কেনার আগে দাম জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। এছাড়াও পার্কে প্রবেশ মুখের ডান দিকে দুইটি খাবার হোটেল আছে। হোটেল তথা রেস্তোরা দুটির নাম: বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা ও সিংহ পর্যবেক্ষন রেস্তোরা। সেখানেও খাওয়া দাওয়া করতে পারেন পাশাপাশি রেস্তোরাঁ বসেই বাঘ, সিংহ পরিদর্শন করা যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় শুকনা খাবার ও পানি বাহির থেকে কিনে ভিতরে প্রবেশ করা কেননা ভেতরে খাবারের দাম অনেক বেশি।
সাফারি পার্ক সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
[sp_easyaccordion id=”539″]
সবশেষে
আজকে আমরা জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক তথা গাজীপুর সাফারি পার্ক সম্পর্কে। এ সম্পর্কে আপনারা মতামত জানাতে চাইলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারবেন। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।