ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে কোরআন-হাদিসে উল্লেখিত কিছু তথ্য
ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে কোরআন-হাদিসে উল্লেখিত কিছু তথ্য ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমি। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইসলামের ইতিহাসের
অনেক গুরুত্বপুর্ণ ঘটনাপ্রবাহ। ইসলাম আগমনের আগে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বসবাস করতেন তৎকালীন সময়ের আসমানী ধর্মের অনুসারীরা।
হজরত ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, মুসা, দাউদ, সুলাইমান ও ঈসা আলাইহুমুস সালামের ধর্মের অনুসারীরা এই
ভূমিতে বসববাস করতেন তৎকালীন সময়। এছাড়াও আরও অনেক নবীর আবাস্থল ছিলো ফিলিস্তিন ভূমি।
ফিলিস্তিনের জেরুসালেম নগরীতে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ
মসজিদের একটি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসার কথা তুলে ধরেছেন, এখান থেকেই সংঘটিত
হয়েছিলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মেরাজ।
ইসলামের সূচনাকালে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করতেন মুসলমানরা। তাই মুসলমানদের প্রথম
কেবলা বলেও সুপরিচিত পবিত্র এই মসজিদ। উমাইয়া, আইয়ূবী, সেলজুক, মামলুক, উসমানীওসহ বিভিন্ন মুসলিম
শাসনামলে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিলো মুসলিমদের অধীনেই।
বায়তুল মুকাদ্দাসকে ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ক্রুসেডের সময় দখল করে নেয় ক্রুসেডাররা। ক্রুসেডাররা মসজিদে প্রবেশ
করে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। পবিত্র আল কুদসের ভেতর ও বাহিরে মুসলিমদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল তারা ।
১১১৯ খ্রিষ্টাব্দে একে নাইটস টেম্পলারদের সদরদপ্তর করা হয়। সেসময় আল আকসা মসজিদকে রাজপ্রাসাদ ও পাশাপাশি
ঘোড়ার আস্তাবল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তৎকালীন সময়ের মুসলিম বীর সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ূবী ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর শুক্রবার জেরুসালেম ও বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করেন। যা ইসলামি ইতিহাসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি।
এর বাইরেও কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বায়তুল মুকাদ্দাস বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এ পোষ্টের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো:
ইসরা ও মিরাজের ভূমি
জেরুসালেমের বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইসরা বা রাসূলুল্লাহ (স.) রাত্রিকালীন
ভ্রমণের সূচনা হয়। যাকে মেরাজের ঘটনা বলা হয়। এই রাতে জিবরাঈল আলাইহিস সালামের সঙ্গে আল্লাহর রাসূল সাত
আসমান ভ্রমণ করেন, এই রাতেই তাকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল এবং তিনি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেন।
ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে এই ভ্রমণ শুরু করেন তারা। এখানে আল্লাহর রাসূল সব নবীর নামাজের ইমামতি করেন।
তারপর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
— (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত, ১)
মুসলমানদের প্রথম কিবলা
ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা হলো মুসলমানদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসূলু (স.) ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।
— ( সূরা বাকারা, ১৫০)
পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ
ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ মজসিদুল হারাম। এরপরের স্থানে আছে সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুসালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ মসজিদে আকসা।
বরকতময় ভূখণ্ড
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন
‘যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।
— (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত, ১)
তৃতীয় সম্মানিত শহর ও ফজিলতপূর্ণ ভূমি
হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত— মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন তথা বায়তুল মুকাদ্দাস।
সহিহ বুখারিও মুসলিমে হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘(ইবাদতের উদ্দেশ্যে) তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ ও মসজিদুল আকসা।
— (মুসলিম, হাদিস, ৮২৭
সত্যবাদী দলের অবস্থান
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। তখন শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ তথা কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কোথায় থাকবেন? মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশপাশে থাকবেন।
— (মুসনাদে আহমদ: ২১২৮৬)
ফিলিস্তিন হাশরের ময়দান
মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু বলুন!’
হযরত মুহাম্মদ সাঃ বললেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান, পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়ার পাওয়া যায়।’
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদুল আকসাতে গমনের শক্তি-সামর্থ্য রাখেন না তার ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?’ তিনি বললেন, ‘সে যেন তার জন্য জ্বালানি তেল হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করে। কেননা যে বায়তুল মাকদিসের জন্য হাদিয়া প্রেরণ করে, সে তাতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়ার লাভ করিবে।
— (মুসনাদে আহমদ, হাদিস, ২৬৩৪৩)